একটা সিনেমার পেছনে যেখানে ৬ বছর ব্যায় করাই বর্তমানে বিলাসিতা সেখানে একটা সিনেমার জন্য ১৬ বছরেরমতো সময় খরচ করা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়!!!!বলছিলাম মালয়ালাম ছবি আদুজিভীথাম-The Goat life এর কথা। ২০০৮ সালে কেরালার একটি বেস্ট সেলিং বই, যা একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত তার উপর একটি সিনেমা নির্মানের পরিকল্পনা করেন মালয়ালাম পরিচালক ব্লেসি। সিনেমার লিড রোলের জন্য প্বথীরাজ সুকুমারানকে কাস্ট ও করেন। কিন্তু সিনেমার বাজেট অনেক বেশী হওয়ায় কোনো প্রযোজক এর উপর ইনভেস্ট করতে রাজি হচ্ছিলো না। দুইজন প্রযোজক রাজি হয়েও পরে না করে দেন।
পরে ২০১৬ সালে অবশেষে প্রযোজক পান ব্লেসি। দুই বছর স্ক্রিপ্ট লেখা, এর পরের দুই বছর প্রি প্রডাকশনের কাজ কমপ্লিট করার পর ২০২০ সালে আদুজিভীথামের শুটিং শুরু হয়। ঠিক তখনই কোভিডের বাধা এসে দাড়ায় যেহেতু পুরো ছবি জর্দানের রিয়েল লোকেশনে শুট করা হচ্ছিলো। পরবর্তী দুই বছর যথেষ্ট পরিশ্রম,কষ্ট ত্যাগের বিনিময়ে ফাইনালি ২০২২ সালে এই ছবির শুটিং কমপ্লিট হয়।এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই ছবির পরিচালক ব্লেসি একটা সময়ে যখন নিজের পিক ফর্মে ছিলেন, রেগুলার মোহানলালদের সাথে কাজ করতেন এই ছবির জন্য গত ১১ বছর তিনি অন্য কোনো ছবি ডিরেকশন দেননি।
বাজেটে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ করতে রাজি ছিলেন না বিধায় দীর্ঘদিন এই ছবির জন্য প্রযোজক খুজে পাচ্ছিলেন না। ব্লেসি এতোটাই প্যাশনেট ছিলেন এই ছবি নিয়ে যে কোভিড রেস্ট্রিকশনের মধ্যেও বহু কষ্টে রিয়েল লোকেশনে এই ছবির শুটিং সম্পন্ন করেছিলেন। এএআজকাল যেখানে ভিএফএক্সের সাহায্য পর্দায় নকল বাঘ ও দেখানো সহজ সেখানে তিনি সৌদি আরব থেকে অরিজিনাল উট, ছাগল আনিয়ে শুটিং করেছিলেন। এই ছবির একটা সিনে ছাগলের চোখ দিয়ে প্বথীরাজকে দেখানোর জন্য টানা আটদিন শুধু এই একটা শটের ই শ্যুট করেছিলেন যাতে এটা ন্যাচারাল লাগে!!!প্বথীরাজ যখন এই সিনেমা সাইন করেছিলেন তখন তার বয়স ছিলো একেবারে কম।
১৬ বছর পর আজ যখন এই ছবি মুক্তির অপেক্ষায় তখন তিনি বিবাহিত এবং এক মেয়ের বাবা। জীবনের বড় একটা সময় তিনি এই ছবির পেছনে ব্যয় করেছেন। বারবার এই ছবি কমপ্লিট করতে বাধা আসছিলো কিন্তু প্বথীরাজ এই ছবি ছেড়ে যাননি। শুটিং এর সময় যখন ক্যারেক্টার এর জার্নির পরিপ্রেক্ষিতে প্বথীরাজের শরীরের ওজন কমানোর দরকার ছিলো তখন একসাথে প্রায় ৩০ কেজি ওজন কমান তিনি। ফলে তার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু এর মধ্যে ও তিনি শুটিং চালিয়ে যান। আজকালের ট্রেন্ড হয়ে গেছে যে কোনো এ্যাক্টর ১০ কেজি ওজন বাড়ালে-কমালে ও তার বডি ট্রান্সফর্মেশনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড দেয়।
প্বথীরাজের এই বডি ট্রান্সফর্মেশনের জার্নির ভিডিও প্রডাকশন থেকে আপলোড দিতে চাইলে তিনি সাফ মানা করে দেন। কারন তার মনে হয়েছে এতে যে রিয়েল লাইফ ক্যারেক্টার টা তিনি এই ছবিতে প্লে করেছেন সেই ব্যাক্তির আবেগকে অসম্মান করা হয়….আদুজীভিথাম একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।৯০ এর দশকে কেরালা থেকে এক ব্যাক্তি ভাগ্য পরিবর্তনের তাগিদে সৌদি আরব যায় কাজের জন্য। কিন্তু যে দালালের সাহায্যে যায় সেই দালাল তাকে সৌদিতে পাচার করে দেয় মরুভূমিতে। সবকিছু বুঝে উঠতে উঠতে সেই ব্যাক্তি নিজেকে সৌদির মরুভূমি তে জিম্মি অবস্থায় আবিষ্কার করে। সেখানকার স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যাক্তি তাকে জোড়পূর্বক তার খামারে থাকা ছাগল চরানোর দায়িত্ব দেয়। সে সেখান থেকে পালাতে চাইলে ওই লোক এবং তার ভাই মিলে অমানবিক অত্যাচার চালানো শুরু করে তার উপর।
আরবি ভাষা বুঝতে না পারায় এবং পথঘাট না চেনায় সে একপ্রকার বন্দি হয়ে যায় সেখানে। প্রতিদিন সারাবেলা তাকে দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করানোর পর রাতে তাকে খাবার হিসেবে একবারের জন্য দেওয়া হতো রুটি এবং অল্প কিছু দুধ। এভাবে চলতে চলতে অবস্থা এমন হয় যে শারীরিক এবং মানুষিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া সেই ব্যাক্তি তার সাথে থাকা ছাগলদের সাথে নিজের কোনো পার্থক্য খুজে পায়না। ছবির ট্যাগলাইন The Goat Life হওয়ার অন্যতম কারন ছিলো এটি।দীর্ঘ তিন বছর দুর্বিষহ জীবন কাটানোর পর অবশেষে একসময় সেই ব্যাক্তি সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং একসময় ভারতে ফিরে আসে।দেশে ফিরে আসার পর এক লেখকের সাথে পরিচয়ে তিনি তার সেই পুরো জার্নি বর্ননা করেন। সেখান থেকেই লেথা হয় বই। যা ২০০৮ সালে কেরালার বেস্ট সেলিং বই ছিলো। এই বই থেকেই নির্মিত হয় আদুজীভিথাম-The Goat Life যা আগামীকাল থিয়েটারে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এবং সেই ব্যাক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্বথীরাজ সুকুমারান।প্যান ইন্ডিয়ান রিলিজ পেতে যাওয়া এই ছবি হিন্দী তে ও মুক্তি পেতে যাচ্ছে……
লেখক : AL Nahian Shafat