বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন আমাদের অনেকের রয়েছে। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের জন্য ভিসা আবেদনের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো মেডিকেল চেকআপ। এই চেকআপের মাধ্যমে আপনার শারীরিক সুস্থতা যাচাই করা হয়, যা ভিসা প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ। তবে আপনাদের জন্য একটি শুভ খবর হচ্ছে,বর্তমান সময়ে আপনাকে মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় না বরং এখন ঘরে বসে অনলাইনেই মেডিকেল রিপোর্ট চেক করা সম্ভব। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানাবো কীভাবে পাসপোর্ট নাম্বার বা স্লিপ নাম্বার দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করবেন, এর ফিট বা আনফিট হওয়ার কারণ এবং করণীয় কী।তাহলে দেরি কেন আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। তবে মেডিকেল রিপোর্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ এটি আগে জেনে নেওয়া যাক।
মেডিকেল রিপোর্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিদেশে যাওয়ার জন্য মেডিকেল চেকআপ বাধ্যতামূলক কারণ এটি নিশ্চিত করে যে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ ও বিদেশে কাজ বা বসবাসের জন্য উপযুক্ত। এই পরীক্ষায় আপনার সাধারণ স্বাস্থ্য, সংক্রামক রোগ (যেমন যক্ষ্মা, এইচআইভি) এবং বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা তা যাচাই করা হয় যাতে আপনি পরবর্তীতে বিদেশে সুস্থ ভাবে বসবাস করতে পারেন। মূলত ভিসা কর্তৃপক্ষ এই রিপোর্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে আপনি গন্তব্য দেশে গিয়ে স্বাস্থ্যগত কারনে আপনার সমস্যা না হয় । সেহেতু মেডিকেল রিপোর্ট চেক করা শুধু প্রক্রিয়ার অংশ নয়, বরং এটি আপনার নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়ার একটি সুযোগ।পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার ধাপ
আপনি যদি বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল পরীক্ষা দিয়ে থাকেন, তাহলে অনলাইনে মেডিকেল রিপোর্ট চেক করা এখন খুবই সহজ। নিচে ধাপে ধাপে সুবিন্যস্তভাবে সকল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে:- সঠিক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আরব দেশগুলোর (GCC) জন্য মেডিকেল রিপোর্ট চেক করতে Wafid ওয়েবসাইট ব্যবহৃত হয়। অন্য দেশের জন্য সেই দেশের ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে যেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ:
- সৌদি আরব: Wafid
- মালয়েশিয়া: FOMEMA (কিছু ক্ষেত্রে)
- কাতার: Qatar Medical Center
- পাসপোর্ট নাম্বার বা স্লিপ নাম্বার দিন ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার বা মেডিকেল স্লিপ নাম্বার (GCC Slip Number) ইনপুট করুন।
- জাতীয়তা নির্বাচন করুন “Nationality” অপশনে “Bangladesh” সিলেক্ট করুন।
- ক্যাপচা পূরণ ও সাবমিট ক্যাপচা কোডটি পূরণ করে “Check” বা “Submit” বাটনে ক্লিক করুন। এরপর আপনার মেডিকেল রিপোর্ট চেক হয়ে ফিট বা আনফিট স্ট্যাটাস দেখাবে।
- রিপোর্ট ডাউনলোড (যদি প্রযোজ্য হয়) কিছু ওয়েবসাইটে রিপোর্ট ডাউনলোডের অপশন থাকে। PDF ফরম্যাটে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারেন।
ফিট এবং আনফিট মেডিকেল রিপোর্ট: এর অর্থ কী?
মেডিকেল রিপোর্টে দুটি সম্ভাব্য ফলাফল আসে: ফিট (FIT) এবং আনফিট (UNFIT)। এর অর্থ ও প্রভাব নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:- ফিট (FIT) এর মানে আপনি স্বাস্থ্যগতভাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত। মেডিকেল পরিক্ষার রিপোর্ট এ আপনার পরীক্ষায় কোনো গুরুতর সমস্যা ধরা পড়েনি। এই রিপোর্ট নিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারবেন।
- আনফিট (UNFIT) এর মানে আপনার শরীরে এমন কিছু সমস্যা পাওয়া গেছে যা ভিসা পাওয়ার পথে বাধা হতে পারে ও অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করূ হয় । UNFIT হলে ভিসা বাতিল হতে পারে, এবং আপনাকে পুনরায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর আবার মেডিকেল পরীক্ষা দিতে হবে।
মেডিকেল রিপোর্টে কী কী পরীক্ষা করা হয়?
মেডিকেল রিপোর্টে কী কী পরিক্ষা করা হয় আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না ও অনেকের এ ব্যাপারে ভুল ধারনা রয়েছে। বিদেশ যাওয়ার জন্য মেডিকেল চেকআপে সাধারণত যে সকল পরিক্ষা করা হয় তার মধ্যে রয়েছে:- শারীরিক পরীক্ষা (Physical Examination)
- রক্ত পরীক্ষা (Blood Test)
- মূত্র পরীক্ষা (Urine Test)
- বুকের এক্স-রে (Chest X-Ray)
- ইমিউনাইজেশন স্ট্যাটাস (Vaccination Status)
- বিশেষ রোগের পরীক্ষা (যেমন TB, HIV, Hepatitis)
যেসব কারণে মেডিকেল রিপোর্ট আনফিট হয়
মেডিকেল রিপোর্ট আনফিট হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ অবশ্যই থাকে। আপনার মেডিকেল রিপোর্ট আনফিট হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ হলো:- সংক্রামক রোগ: যেমন হেপাটাইটিস বি/সি, এইচআইভি, যক্ষ্মা।
- চর্মরোগ: গুরুতর ত্বকের সমস্যা।
- হৃদরোগ: হার্টের জটিল সমস্যা।
- শ্বাসকষ্ট: হাঁপানি বা ফুসফুসের রোগ।
- গর্ভাবস্থা: কিছু দেশে গর্ভবতী মহিলাদের ভিসা দেওয়া হয় না।
- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ত্রুটি: কিছু দেশে শারীরিক অক্ষমতা গ্রহণযোগ্য নয়। তবেম যেসকল দেশে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত সেসকল দেশে যেতে পারবেন।
মেডিকেল রিপোর্টে আনফিট হলে করণীয় কী?
যদি আপনার মেডিকেল রিপোর্ট চেক করে দেখেন আনফিট এসেছে, তাহলে নিচের ধাপসমূহ অনুসরণ করতে পারেন:- সমস্যাটি চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান।
- রোগ সারিয়ে সুস্থ হোন।
- সুস্থ হওয়ার পর আবার মেডিকেল চেকআপ করান।
- ফিট রিপোর্ট পেলে ভিসা প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
দেশভিত্তিক মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার তথ্য
দেশভিত্তিক ভাবে অনেকেই মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। নিম্নে আমরা বেশকয়েকটি জনপ্রিয় দেশের জন্য মেডিকেল রিপোর্ট চেক করার বিস্তারিত দেওয়া হলো:- সৌদি আরব: Wafid ওয়েবসাইটে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে চেক করুন।
- মালয়েশিয়া: FOMEMA পোর্টালে লগইন করে স্ট্যাটাস দেখুন।
- কাতার: Qatar Medical Center এ ভিসা ও পাসপোর্ট নাম্বার দিন।
- ওমান ও কুয়েত: Wafid বা স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।
মেডিকেল রিপোর্ট সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর (FAQ)
মেডিকেল রিপোর্টের মেয়াদ কতদিন?
সাধারণত ৩ মাস (৯০ দিন)। এর মধ্যে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
মেডিকেল রিপোর্ট কতদিনে প্রস্তুত হয়?
পরীক্ষার ৭-১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিটি জেলায় ছোট বড় অনেক ডায়াগনস্টিক গড়ে উঠেছে তবে আপনি যদি চান সেক্ষেত্রে দেশের সেরা কিছু ডায়াগনস্টিক থেকে আপনার মেডিকেল রিপোর্ট নিতে পারেন। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে মেডিকেল করেন, তবে নিচের সেন্টারগুলোতে রিপোর্ট চেক করতে পারেন:- রাজধানী ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিস
- সিলমুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার
- নোভা মেডিকেল
- ক্যাথার্সিস মেডিকেল
- আল হামাদ মেডিকেল