মেসি কত টাকার মালিক এ সম্পর্কে জানতে চান? লিওনেল মেসি, ফুটবল জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। যিনি তার অসাধারণ খেলার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করেছেন ও ভবিষ্যতে আরো করবেন। তবে মেসির জনপ্রিয়তা শুধু মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং তার বিপুল সম্পদ নিয়েও ভক্তদের মনে কৌতূহলের শেষ নেই। “মেসি কত টাকার মালিক” এই প্রশ্নটি গুগলে বারবার খোঁজা হয়। এই আর্টিকেলে আমরা মেসির মোট সম্পদ, আয়ের উৎস, ব্যয় এবং বিনিয়োগের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব। তাহলে দেরি কেন চলুন মেসি কত টাকার মালিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
মেসি কত টাকার মালিক: সর্বশেষ হিসাব
২০২৫ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফোর্বস ও স্পোর্টিকোর মতো বিশ্বস্ত সূত্রে লিওনেল মেসির মোট সম্পদের পরিমাণ সর্বমোট ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ( বাংলাদেশি টাকায় সর্বমোট প্রায় ৭,৯০৬ কোটি বাংলাদেশি টাকা)। এই পরিমাণ তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অ্যাথলিটদের একজন করে তুলেছে। তবে কিছু সূত্র অনুযায়ী, যেমন সেলিব্রিটি নেট ওয়ার্থ, তার সম্পদের পরিমাণ ৬০০ মিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ৬,৬০৮ কোটি টাকা থেকে ৭,৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।
তবে মেসির এই বিপুল সম্পদ শুধু ফুটবল মাঠ থেকে আসেনি। বরং মেসির তার আয়ের একটি বড় অংশ এসেছে বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপ ও বিভিন্ন বিনিয়োগ থেকে। চলুন তবে তার আয়ের উৎসগুলো বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক।
মেসির আয়ের প্রধান উৎস
লিওনেল মেসির আয় মূলত তিনটি প্রধান খাত থেকে আসে: ফুটবল ক্লাবের বেতন, স্পনসরশিপ চুক্তি, এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ।
১. ফুটবল ক্লাবের বেতন
বর্তমানে মেসি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামি’র হয়ে খেলছেন। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ইন্টার মায়ামি মেসিকে বছরে ১২০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৪৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা) বেতন দেয়। এছাড়া বোনাস হিসেবে তিনি প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা) পান।
২০২৩ সালে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর মেসির আয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে তিনি শুধু বেতনই নয়, ক্লাবের বাণিজ্যিক আয়ের একটি অংশও পান। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাপলের সঙ্গে টিভি সম্প্রচার চুক্তি থেকে মেসি অতিরিক্ত আয় করেন।
২. স্পনসরশিপ এবং বিজ্ঞাপন
মেসির ব্র্যান্ড মূল্য অতুলনীয়। তিনি অ্যাডিডাস’র আজীবন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। এই চুক্তি থেকে তিনি বছরে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করেন। এছাড়া পেপসি, হুয়াওয়ে, গ্যাটোরেড, এবং বাডওয়াইজার’র মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে তার স্পনসরশিপ চুক্তি রয়েছে। ফোর্বসের হিসাবে, মেসির ক্যারিয়ারে স্পনসরশিপ থেকে আয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪,৮৬৫ কোটি টাকা), যা তার মোট আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।
বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির ব্র্যান্ড মূল্য আরও বেড়েছে। ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জয়ের পর তার এনডোর্সমেন্ট চুক্তির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. বিনিয়োগ এবং ব্যবসা
মেসি শুধু ফুটবলার নন, একজন সফল ব্যবসায়ীও। তার বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে:
- হোটেল ব্যবসা: মেসির মালিকানাধীন MiM হোটেল চেইন স্পেন এবং অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়। তার একটি বিলাসবহুল হোটেলে ৭৭টি বেডরুম রয়েছে, যেখানে এক রাত থাকার ভাড়া ১০৫ পাউন্ড।
- রিয়েল এস্টেট: বার্সেলোনায় সমুদ্রের ধারে মেসির একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট ফুটবল মাঠ রয়েছে। এই সম্পত্তির উপর দিয়ে কোনো বিমান চলাচল করতে পারে না, যা তার সম্পদের ব্যতিক্রমী মূল্য প্রকাশ করে।
- মেসি ব্র্যান্ড: মেসি তার নিজস্ব পোশাক ও পণ্য ব্র্যান্ড চালু করেছেন, যা তার আয়ের একটি অংশ যোগ করে।
মেসির ব্যয়: বিলাসবহুল জীবনযাপন
মেসি যেমন উপার্জন করেন, তেমনি বিলাসবহুল জীবনযাপনেও তার কোনো কার্পণ্য নেই। তার ব্যয়ের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো:
- প্রাইভেট জেট: মেসির মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট জেট রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার।
- দামি গাড়ি: মেসির গাড়ির সংগ্রহে রয়েছে ফেরারি, মার্সিডিজ, অডি, এবং পাগানি জোনডা’র মতো হাই-স্পিড গাড়ি। এই গাড়িগুলোর মোট মূল্য কয়েক মিলিয়ন ডলার।
- বিলাসবহুল বাড়ি: বার্সেলোনা, রোজারিও, এবং মায়ামিতে মেসির বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। তার বার্সেলোনার বাড়ির মূল্য প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার।
- দান ও সামাজিক কাজ: মেসি তার লিও মেসি ফাউন্ডেশন’র মাধ্যমে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিপুল অর্থ দান করেন। তিনি নিয়মিত দান ও সামাজিক সংস্কারমূলক কাজে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করেন।
মেসি বনাম রোনালদো: সম্পদের তুলনা
মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু মাঠে নয়, সম্পদের দিক থেকেও। ফোর্বসের ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, রোনালদোর মোট সম্পদ ৯২৩ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১১,২২৭ কোটি টাকা), যা মেসির চেয়ে বেশি। তবে মেসির বার্ষিক আয় (১৩৫ মিলিয়ন ডলার) রোনালদোর (২৬০ মিলিয়ন ডলার) তুলনায় কম হলেও, তার স্থিতিশীল বিনিয়োগ ও ব্র্যান্ড মূল্য তাকে দীর্ঘমেয়াদে শীর্ষে রাখছে।
মেসির সম্পদ বৃদ্ধির কারণ
মেসির সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে:
- বিশ্বকাপ জয়: ২০২২ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর মেসির ব্র্যান্ড মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ইন্টার মায়ামিতে যোগদান: আমেরিকান ফুটবল লিগে যোগ দেওয়ার পর অ্যাপল ও অ্যাডিডাসের মতো ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে তার চুক্তি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
- সামাজিক মাধ্যমে প্রভাব: মেসির ইনস্টাগ্রামে ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে, যা তাকে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।
আরও জানতে পারেনঃ স্কয়ার ফিট বের করার নিয়ম
শেষ কথা
লিওনেল মেসি শুধু ফুটবলের জাদুকর নন, তিনি একজন আর্থিক জাদুকরও। তার মোট সম্পদ প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার (৭,৯০৬ কোটি টাকা), যা তাকে বিশ্বের শীর্ষ ধনী অ্যাথলিটদের একজন করে তুলেছে। ফুটবল ক্লাবের বেতন, স্পনসরশিপ, এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে তিনি প্রতিনিয়ত তার সম্পদ বাড়াচ্ছেন। তবে তার দানশীলতা ও সামাজিক কাজ তাকে ভক্তদের কাছে আরও প্রিয় করে তুলেছে।
আপনি যদি মেসির সম্পদ বা তার জীবন সম্পর্কে আরও জানতে চান, তবে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন। এই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন এবং আপনার মতামত কমেন্টে জানান!