নবম-দশম বিজ্ঞান ১০ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
১নং প্রশ্ন:
স্বপ্না বাসে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। বাসটির ভর ছিল ১৪০০ kg এবং এটি ৪ মি./সে.² ত্বরণে চলছিল। চলন্ত বাসটিতে হঠাৎ ড্রাইভার ব্রেক চাপলে স্বপ্নাসহ যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। আবার বাসটি যখন চলতে শুরু করল, তখন তারা পিছনের দিকে হেলে পড়ল।
ক. স্পর্শ বল কাকে বলে?
উত্তর:
স্পর্শ বল (Contact Force) হল দুটি বস্তুর মধ্যে সরাসরি সম্পর্কের মাধ্যমে সৃষ্ট বল। যখন দুটি বস্তুর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয়, তখন এই ধরনের বল সৃষ্টি হয়। যেমন, যখন আপনি কোন বস্তুকে ধাক্কা দেন বা কোন বস্তুর সাথে ঘষেন, তখন স্পর্শ বল সৃষ্টি হয়।
খ. বল বলতে কী বুঝায়?
উত্তর:
বল হল একটি শারীরিক পরিমাণ যা একটি বস্তুর গতি পরিবর্তন করতে পারে। বলের মাধ্যমে গতি বৃদ্ধি, হ্রাস বা দিশা পরিবর্তন করা যায়। বলের একক হল নিউটন (N)।
গ. বাসটির ওপর ক্রিয়াশীল বলের মান নির্ণয় কর।
উত্তর:
বাসটির ওপর ক্রিয়াশীল বলের মান নির্ণয়ের জন্য নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র প্রয়োগ করা হয়।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী,
F=maF = ma
যেখানে,
FF = ক্রিয়াশীল বল,
mm = বস্তুটির ভর,
aa = ত্বরণ।
এখানে,
m=1400 kgm = 1400 \, \text{kg},
a=4 m/s2a = 4 \, \text{m/s}^2,
তাহলে,
F=1400×4=5600 NF = 1400 \times 4 = 5600 \, \text{N}
অতএব, বাসটির ওপর ক্রিয়াশীল বলের মান হল 5600 N।
ঘ. যাত্রীরা প্রথমে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লেও পরবর্তীতে পিছনে হেলে পড়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
যাত্রীরা প্রথমে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে কারণ, বাসের ত্বরণ হঠাৎ কমে যাওয়ার ফলে তাদের শরীরের গতিবেগ অপরিবর্তিত থাকে, অর্থাৎ, তাদের শরীরের গতিবেগ আগের অবস্থায় থাকে এবং বাসের কম গতি হওয়ার কারণে তারা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যখন বাসটি আবার চলতে শুরু করে, তখন বাসের ত্বরণ তাদের শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করে এবং তারা পিছনের দিকে হেলে পড়ে। এটি একটি উদাহরণ যেখানে জড়তা (Inertia) কাজ করে।
২নং প্রশ্ন:
তূর্য দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। একদিন সে বাসায় একটি ভারী টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে টেবিলকে টানতে শুরু করল। কিন্তু চেয়ারসহ সে নিজেই টেবিলের দিকে সরে গেল। পরদিন সে একটি মার্বেলকে রুমের মসৃণ মেঝেতে নির্দিষ্ট বলে গড়িয়ে দিল। এরপর বাসার বাইরে পিচের রাস্তায় একই মার্কেলকে একই বলে গড়িয়ে দিল। তখন এটি তার চেয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করল।
ক. নিউটনের গতিবিষয়ক দ্বিতীয় সূত্রটি কী?
উত্তর:
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী,
F=maF = ma
এটি বলে যে, কোন বস্তুর ওপর প্রয়োগ করা বল (FF) তার ভর (mm) এবং ত্বরণের (aa) গুণফল। অর্থাৎ, একটি বস্তুতে ক্রিয়া করা বল যত বেশি হবে, তার ত্বরণও তত বেশি হবে, provided that its mass remains constant.
খ. জড়তা বলতে কী বুঝায়?
উত্তর:
জড়তা (Inertia) হল একটি বস্তু বা পদার্থের প্রবণতা তার বর্তমান অবস্থায় (যতটুকু গতি বা স্থিতিশীলতা থাকে) থাকার। অর্থাৎ, যদি একটি বস্তু স্থির থাকে, তবে সেটি স্থির থাকার চেষ্টা করবে, আর যদি এটি চলন্ত থাকে, তবে সেটি চলতে থাকার চেষ্টা করবে যতক্ষণ না কোনো বাহ্যিক বল সেটিকে বাধাগ্রস্ত করে।
গ. চেয়ারসহ তূর্য টেবিলের দিকে সরে আসলো কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
তূর্য টেবিলকে টানতে শুরু করার সময় চেয়ারটি তার শরীরের সাথে যুক্ত ছিল। যেহেতু টেবিলটি টানতে তূর্য শক্তি প্রয়োগ করছিল, তখন তার শরীরের জড়তার কারণে চেয়ারটি তার সঙ্গে সরে যেতে থাকে। এটি হয় কারণ, তার শরীরের গতির পরিবর্তন হবার জন্য কোনো বাহ্যিক বল প্রয়োগ হচ্ছে না, ফলে সে নিজের গতির পরিবর্তন করতে না পেরে চেয়ারটি টেবিলের দিকে সরে যায়।
ঘ. মার্বেলটির দুটি স্থানে অতিক্রান্ত দূরত্ব ভিন্ন হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
মার্বেলটির দুটি স্থানে অতিক্রান্ত দূরত্ব ভিন্ন হওয়ার কারণ হলো:
- রুমের মসৃণ মেঝে: মসৃণ মেঝেতে ঘর্ষণ শক্তি কম হওয়ায় মার্বেলটি সহজেই গড়িয়ে যায় এবং বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে।
- পিচের রাস্তায়: পিচের রাস্তায় ঘর্ষণ শক্তি বেশি থাকে, তাই মার্বেলটি দ্রুত থেমে যায় এবং কম দূরত্ব অতিক্রম করে।
Composition on My Visit to a Place of Historical Interest 2025
Gap Filling for SSC Board Question Without Clues and Answer
৩নং প্রশ্ন
ক. জড়তা কাকে বলে?
উত্তর:
জড়তা (Inertia) হল একটি বস্তু বা পদার্থের সেই প্রবণতা যা তার বর্তমান অবস্থায় থাকতে চায়, অর্থাৎ একটি বস্তু যদি স্থির থাকে, তবে সেটি স্থির থাকার চেষ্টা করবে এবং যদি চলন্ত থাকে, তবে সেটি চলতে থাকার চেষ্টা করবে যতক্ষণ না কোনো বাহ্যিক বল সেটির গতিতে পরিবর্তন আনে। এটি নিউটনের প্রথম সূত্রের দ্বারা বর্ণিত। জড়তার কারণে কোন বস্তু সহজে তার গতির পরিবর্তন করে না।
খ. টেবিল টেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বল কাজ করে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
টেবিল টেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি বল কাজ করে:
- আকর্ষণ বল (Applied Force): এটি সেই বল যা তূর্য বা ব্যক্তি টেবিলটিকে টেনে নিতে ব্যবহার করছে। এটি সরাসরি টেবিলের ওপর প্রয়োগ করা একটি বাহ্যিক বল।
- ঘর্ষণ বল (Frictional Force): টেবিল এবং মেঝের মধ্যে ঘর্ষণ শক্তি কাজ করে। এই বলটি টেবিলটির গতির বিপরীত দিকে কাজ করে এবং টেবিলটি সহজে চলতে বাধা দেয়। ঘর্ষণ বলের মান মেঝের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা ও বস্তুটির ভরের ওপর নির্ভর করে।
গ. রকেটটির উড্ডয়নকালীন বলের মান নির্ণয় কর।
উত্তর:
রকেটটির উড্ডয়নকালীন বল নির্ণয়ের জন্য, তার ভর এবং ত্বরণ প্রয়োজন। রকেটের উড্ডয়নকালীন শক্তি হল উড্ডয়ন করা, এবং এর জন্য রকেটটি যেই বলের সাহায্যে আকাশে উঠছে, তা হল রকেটের বেরিয়ে আসা গ্যাসের প্রতিক্রিয়া থেকে প্রাপ্ত শক্তি। এটি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়।
নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী,
F=maF = ma
যেখানে,
FF = ক্রিয়াশীল বল,
mm = রকেটের ভর,
aa = রকেটের ত্বরণ।
রকেটের উড্ডয়নে তার ত্বরণ এবং ভরের উপরে নির্ভর করবে। এই সূত্রে আমরা রকেটের ভর এবং তার ত্বরণের মান জানলে, উড্ডয়নকালীন বলের মান নির্ণয় করা সম্ভব।
ঘ. উদ্দীপকের বস্তুটির উড্ডয়নে নিউটনের গতির কোন সূত্রের প্রয়োগ ঘটবে? বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
রকেটের উড্ডয়নে নিউটনের তৃতীয় সূত্র (Action and Reaction) প্রয়োগ হয়। নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, “প্রত্যেক ক্রিয়ার জন্য সমান এবং বিপরীত একটি প্রতিক্রিয়া থাকে।”
রকেট যখন গ্যাস বের করে নিচের দিকে, তখন গ্যাসের ওপর একটি বাহ্যিক বল প্রয়োগ হচ্ছে, এবং এর ফলে গ্যাসটি রকেটের নিচের দিকে ধাক্কা দেয়। এই ক্রিয়া হিসেবে গ্যাসের ওপর প্রয়োগ করা বাহ্যিক বলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে রকেটটি উপরের দিকে উড্ডয়ন করতে শুরু করে। এটি রকেটের উড্ডয়নের প্রধান কারণ।
এই প্রক্রিয়া হল নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যবহার, যেখানে গ্যাসের নিচে ফেলা (Action) এবং রকেটের উপরে ওঠা (Reaction) দুইটি বিপরীত ক্রিয়া।