৪৭তম বিসিএস যেভাবে শুরু করবেন তার সম্পর্কে বলা হলো। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী যেই পরীক্ষায় ফেল করে তা হল বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, এসএসসি বা এইচএসসি নয়। প্রিলি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে ৯০% থেকে ৯৫% পাশ করতে পারে না। সফল হতে হলে সঠিক প্রস্তুতির প্রয়োজন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পরীক্ষার সিলেবাস ভালোভাবে জানতে হবে, বিগত বছরের প্রশ্নপত্র দেখার পাশাপাশি দুর্বল এবং শক্তিশালী বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে। কার্যকর প্রস্তুতির জন্য রুটিন তৈরি, বইয়ের তালিকা তৈরি, বেশি বেশি মডেল টেস্ট দেওয়া এবং রিভিশন জরুরি। অনার্স পর্যায় থেকেই বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করা সবচেয়ে ভালো, কারণ শিক্ষাজীবন শেষ করার পর প্রস্তুতি শুরু করলে নানা বাধা আসে। বিসিএস আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে হয় এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
৪৭তম বিসিএসবিসিএস প্রস্তুতি যেভাবে শুরু করবেন
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় মাত্র ৫% থেকে ১০% পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়, তাই এই পরীক্ষায় সফল হতে সঠিক ও পরিকল্পিত প্রস্তুতি জরুরি। প্রস্তুতির জন্য প্রথমে বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। বিগত সালের প্রশ্নপত্র দেখে বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা ও দক্ষতাগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। পড়ার বিষয় নির্ধারণ ও বাদ দেওয়ার টপিক সম্পর্কে জানতে হবে এবং একটি লিখিত রুটিন তৈরি করতে হবে। প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বইয়ের তালিকা তৈরি ও ইংরেজি এবং গণিতে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত মডেল টেস্ট ও স্মার্ট রিভিশন করাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, সমমনা পরীক্ষার্থীদের সাথে স্টাডি গ্রুপ তৈরি করে সম্মিলিত প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
বিসিএস-এ আবেদন প্রক্রিয়া
বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনে হয়। আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের (bpsc.teletalk.com.bd) ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। ৪৭তম বিসিএসের অনলাইন আবেদন অংশে ক্লিক করলে ৩টি অপশন পাওয়া যাবে: সাধারণ ক্যাডার, উভয় ক্যাডার (সাধারণ ও কারিগরি), এবং কারিগরি/পেশাগত ক্যাডার। স্নাতকে কারিগরি পদ না থাকলে সাধারণ ক্যাডার বেছে নিতে হবে। এরপর বিপিএসসি ফরম-১ পূরণ করতে হবে, যা তিনটি অংশে বিভক্ত: ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, এবং ক্যাডার চয়েজ। সব তথ্য পূরণ করে সঠিকতা যাচাই করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
বিসিএস ক্যাডার চয়েস লিস্ট
ক্যাডার চয়েস লিস্টে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ক্যাডার নির্বাচন করতে হবে। সব ক্যাডারই নবম গ্রেডের হলেও কাজের ধরন ভিন্ন। চয়েস দেওয়ার সময় ব্যক্তিত্ব, পড়াশোনা, পরিবার ও নিজের পছন্দ বিবেচনা করতে হবে, কারণ একবার তালিকা জমা দিলে তা পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না। চয়েস লিস্ট দেওয়ার পর আবেদনপত্রটি ভালোভাবে রিভিউ করতে হবে। ভুল থাকলে তা সংশোধন করে তারপর ভ্যালিডেশন কোড, ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করে আবেদন জমা দিতে হবে। সঠিকভাবে আবেদন জমা হলে ইউজার আইডি, ছবি এবং স্বাক্ষর সম্বলিত অ্যাপ্লিকেন্টস কপি পাওয়া যাবে, যা সংরক্ষণ করতে হবে। টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল নম্বর থেকে পরীক্ষার ফি (৭০০ টাকা, বিশেষ ক্ষেত্রে ১০০ টাকা) জমা দিতে হবে। এরপর প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে।
বিসিএস পরীক্ষার ৩টি ধাপ
বিসিএস পরীক্ষা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়:
**১ম ধাপ (প্রিলিমিনারি পরীক্ষা)**:
এটি প্রাথমিক যাচাই পরীক্ষা। ২০০ নম্বরের MCQ প্রশ্ন নিয়ে ১০টি বিষয়ের উপর ২ ঘণ্টার পরীক্ষা হয়। প্রতিটি সঠিক উত্তরে ১ নম্বর এবং ভুল উত্তরে ০.৫ নম্বর কাটা হয়। এই ধাপ শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রার্থী বাছাইয়ের উদ্দেশ্যে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর চূড়ান্ত ফলাফলের সাথে যোগ হয় না, এবং ৫% থেকে ১০% শীর্ষ মেধার প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
**২য় ধাপ (লিখিত পরীক্ষা)**:
প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের জন্য ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। এই ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যোগ করে চূড়ান্ত মেধাতালিকা তৈরি করা হয়। গড় পাস নম্বর ৫০%। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে প্রার্থীকে ভাইভায় ডাকা হয়।
**৩য় ধাপ (ভাইভা/মৌখিক পরীক্ষা)**:
এটি ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা। পাস নম্বর ৫০%। বোর্ড সাধারণত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষায় একাডেমিক পড়াশোনা, ক্যাডার পছন্দ, দেশ, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
**চূড়ান্ত ফলাফল**:
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মোট নম্বর (৯০০ + ২০০ = ১১০০) মেধাতালিকার ভিত্তি গঠন করে। মেধাতালিকা অনুযায়ী প্রার্থীকে বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও এনএসআই যাচাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিয়োগ করা হয়।
যত বেশি নম্বর পাওয়া যায়, ততই পছন্দের ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই সিলেবাস ও মানবন্টন ভালোভাবে জেনে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস
সাধারণ ক্যাডার এবং প্রফেশনাল ক্যাডারের বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস এবং মানবন্টনে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে:
সাধারণ ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষার মানবন্টন:
1. **সাধারণ বাংলা (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)**: ২০০ নম্বর
2. **সাধারণ ইংরেজি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)**: ২০০ নম্বর
3. **বাংলাদেশ বিষয়াবলি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)**: ২০০ নম্বর
4. **আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি**: ১০০ নম্বর
5. **গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা**: ১০০ নম্বর
6. **সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি**: ১০০ নম্বর
প্রফেশনাল ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষার মানবন্টন:
1. **সাধারণ বাংলা**: ১০০ নম্বর
2. **সাধারণ ইংরেজি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)**: ২০০ নম্বর
3. **বাংলাদেশ বিষয়াবলি (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র)**: ২০০ নম্বর
4. **আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি**: ১০০ নম্বর
5. **গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা**: ১০০ নম্বর
6. **দুটি পোস্ট সম্পর্কিত বিষয়**: ২০০ নম্বর
প্রধান মিল ও অমিলসমূহ:
– **সাধারণ ক্যাডারে** সাধারণ বাংলা দুটি পত্রের জন্য ২০০ নম্বর, কিন্তু **প্রফেশনাল ক্যাডারে** একটিমাত্র পত্রের জন্য ১০০ নম্বর বরাদ্দ।
– **সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি** সাধারণ ক্যাডারে থাকে, কিন্তু প্রফেশনাল ক্যাডারে নেই।
– **প্রফেশনাল ক্যাডারে** পোস্ট সম্পর্কিত দুটি বিষয়ের উপর ২০০ নম্বরের পরীক্ষা থাকে, যা সাধারণ ক্যাডারে থাকে না।
– **যারা উভয় ক্যাডারের জন্য আবেদন করেন**, তাদেরকে নয়টি বাধ্যতামূলক বিষয়ের সাথে দুটি পোস্ট সম্পর্কিত বিষয়েও পরীক্ষা দিতে হয়।
সবার জন্য শুভকামনা রইলো। ৪৭তম বিসি এস হোক মেধার ভিত্তিতে।